পাসপোর্ট বলতে গেলে একটা অত্যন্ত দরকারি কাগজ, যা বিদেশ ভ্রমণের সময় লাগে। কিন্তু পাসপোর্টের একটা মেয়াদ থাকে, যা শেষ হয়ে গেলে সেটি আর ব্যবহার করা যায় না। তখন সেটি রিনিউ (নতুন করে নবায়ন) করতে হয়। যদিও প্রক্রিয়াটা শুনতে একটু ঝামেলার মনে হয়, কিন্তু ঠিকঠাক জানলে আসলে খুব সহজেই হয়ে যায়। আজকের এই পোস্টে আমরা জানব, পাসপোর্ট রিনিউ করতে ঠিক কি কি লাগে এবং পুরো ব্যাপারটা কিভাবে করতে হয়।
পাসপোর্ট রিনিউ কেন করব?
পাসপোর্ট সাধারণত ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষ হলে তো আর সেটা কাজে লাগবে না, তখন নতুন করে নবায়ন করতেই হবে। তবে শুধু মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেই নয়, আরও কিছু কারণে পাসপোর্ট রিনিউ করতে হতে পারে। যেমন:
- মেয়াদ শেষ: পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সেটি আর কোনো কাজে আসে না।
- তথ্য পরিবর্তন: আপনার নাম, ঠিকানা বা অন্য কোনো ব্যক্তিগত তথ্য বদলে গেলে নতুন তথ্য দিয়ে রিনিউ করতে হয়।
- ছবি পুরনো হয়ে যাওয়া: অনেক সময় পাসপোর্টের ছবির মান নিয়ে নিয়ম বদলে যায়, তখন নতুন ছবি দিয়ে আবার রিনিউ করতে হতে পারে।
যদি এমন কোনো কারণ থাকে, তাহলে দেরি না করে পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফেলুন। পরের অংশে আমরা জানাব, কিভাবে এই প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করা যায়।
পাসপোর্ট রিনিউ করতে যা যা লাগবে
পাসপোর্ট রিনিউ করতে কিছু দরকারি কাগজপত্র জমা দিতে হয়। চিন্তা করবেন না, সবকিছু হাতের কাছেই পাওয়া যায়। নিচে দরকারি জিনিসগুলোর একটা লিস্ট দিলাম:
- পুরনো পাসপোর্ট: আপনার আগের পাসপোর্টের একটা কপি দিতে হবে।
- ছবি: নতুন তোলা ২টা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- আবেদন ফর্ম: পাসপোর্ট অফিসের নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে দিতে হবে।
- পরিচয়পত্র: জন্ম সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি জমা দিন।
- ফি: রিনিউ করার জন্য কিছু ফি জমা দিতে হবে, যা ব্যাংক বা অনলাইনে দেওয়া যায়।
পাসপোর্ট রিনিউয়ের ধাপগুলো
পাসপোর্ট রিনিউয়ের পুরো প্রক্রিয়া খুব সোজা। নিচের ধাপগুলো ঠিকমতো অনুসরণ করলেই কাজ শেষ।
১. ফর্ম পূরণ করুন:
পাসপোর্ট অফিস বা অনলাইন থেকে ফর্ম নিয়ে সেটা ঠিকঠাক পূরণ করে নিন।
২. সব কাগজপত্র গুছিয়ে রাখুন:
পুরনো পাসপোর্ট, ছবি আর পরিচয়পত্র একসঙ্গে গুছিয়ে রাখুন। সব ঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিন।
৩. ফি জমা দিন:
রিনিউয়ের ফি ব্যাংক বা অনলাইনের মাধ্যমে দিয়ে রাখুন। জমা দেওয়ার রসিদটা রেখে দিন, পরে কাজে লাগবে।
৪. আবেদন জমা দিন:
সব কাগজ আর ফর্ম নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিন। চাইলে অনলাইনেও জমা দিতে পারেন।
৫. সাক্ষাৎকার (যদি লাগে):
কিছু ক্ষেত্রে অফিসে গিয়ে ছোটখাটো সাক্ষাৎকার দিতে হতে পারে, যাতে আপনার তথ্য যাচাই করা যায়।
৬. পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন:
পাসপোর্ট তৈরি হয়ে গেলে অফিস থেকে নিয়ে আসতে হবে। কখনো কখনো সেটা সরাসরি আপনার ঠিকানায় পাঠিয়েও দেয়।
এই ধাপগুলো ঠিকমতো মানলে, পাসপোর্ট রিনিউ করা নিয়ে আর কোনো ঝামেলা হবে না!
কিছু দরকারি টিপস
- সব কাগজ রেডি রাখুন: পাসপোর্ট রিনিউ করতে যা যা কাগজ লাগে, আগে থেকেই গুছিয়ে রাখুন। এতে সময় বাঁচবে আর ঝামেলাও কমবে।
- সঠিক তথ্য দিন: আবেদন ফর্মে ভুল তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হতে পারে। তাই সব তথ্য ঠিকঠাক দিন।
- ছবির মান ঠিক রাখুন: পাসপোর্টের ছবির জন্য কিছু নিয়ম মানতে হয়। তাই পরিষ্কার এবং নির্দিষ্ট মাপের ছবি দিন।
অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ কীভাবে করবেন
এখন অনেক দেশ অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউয়ের সুবিধা দিচ্ছে। এতে সময়ও বাঁচে, ঝামেলাও কম হয়। অনলাইনে আবেদন করার ধাপগুলো নিচে দেখুন:
- ওয়েবসাইটে যান: আপনার দেশের সরকারি পাসপোর্ট পোর্টালে যান।
- রেজিস্ট্রেশন করুন: নিজের তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে লগইন করুন।
- ফর্ম পূরণ করুন: ফর্মে সঠিক তথ্য দিন এবং সব দরকারি কাগজ আপলোড করুন।
- ফি পরিশোধ করুন: অনলাইনে পেমেন্ট করুন।
- আবেদন জমা দিন: ফর্ম জমা দিয়ে কনফার্মেশন কপি সংগ্রহ করুন।
রিনিউ হতে কতদিন লাগবে?
পাসপোর্ট রিনিউ হতে সাধারণত ৭ থেকে ২১ দিন লাগে। তবে দেশভেদে এই সময় কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। বিস্তারিত জানতে আপনার দেশের পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইট দেখে নিন।
কিছু সাধারণ সমস্যা ও সমাধান
- ভুল তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হতে পারে। তাই ফর্ম পূরণের সময় ভালোভাবে চেক করুন।
- যদি সব কাগজপত্র ঠিকমতো না জমা দেন, আবেদন আটকে যেতে পারে। তাই সবকিছু আগে থেকে গুছিয়ে নিন।
উপসংহার
পাসপোর্ট রিনিউ করার কাজ প্রথমে কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু ঠিকভাবে করলে খুব সহজেই হয়ে যায়। আমাদের বলা ধাপগুলো মানলে আপনার কাজ ঝামেলামুক্ত হবে। আর মনে রাখবেন, পাসপোর্টের মেয়াদ আর তথ্য ঠিক আছে কিনা নিয়মিত চেক করা জরুরি।
কোনো প্রশ্ন থাকলে, বিনা দ্বিধায় জানতে পারেন। শুভ ভ্রমণ!